প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডেস্ক রিপোর্ট
09:55:00 | 2024-11-07
বুথফেরতসহ অধিকাংশ জরিপে ইঙ্গিত ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার। বিশ্লেষকরাও দাবি করছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যদিও ফল ঘোষণার পর দেখা গেল অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজের কর্তৃত্ব নিতে তার ইলেক্টোরাল ভোটের প্রয়োজন ছিল ২৭০টি।
বাংলাদেশ সময় গতকাল রাত দেড়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ২৯২টি ইলেক্টোরাল ভোট নিশ্চিত করে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস নিশ্চিত করেছেন ২২৪টি। এখনো ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি চারটি অঙ্গরাজ্যে। এর মধ্যে তিনটিতেই এগিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চার বছরের ব্যবধানে হোয়াইট হাউজে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুবার জয়লাভ করলেন তিনি। দুবারই তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দলের প্রভাবশালী নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল ডেমোক্রেটিক পার্টি। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। আর এবারের নির্বাচনে ছিলেন বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ ছিল দুজনের সামনেই। আর কমলা হ্যারিস জয়লাভ করলে তিনি হতেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট।
তবে কিছুটা ঐতিহাসিক নজির সৃষ্টি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও। পরপর তিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম ও তৃতীয়টিতে জয়লাভের মাধ্যমে ১৩২ বছরের পুরনো একটি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। তার আগে এ নজির আছে শুধু গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের। ১৮৮৪, ১৮৮৮ ও ১৮৯২ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ক্লিভল্যান্ড।
এবারের পর অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের আর কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ থাকছে না। রীতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই।
শুধু ইলেক্টোরাল নয়, পপুলার ভোটেও কমলা হ্যারিসকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কমলা হ্যারিসের চেয়ে অন্তত ৫০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি। চার বছর বিরতির পর হোয়াইট হাউজে ফেরার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে গতকাল ফ্লোরিডায় গতকাল সমর্থকদের এক শোভাযাত্রায় তিনি বলেন, ‘মার্কিন জনগণ আমাদের অভূতপূর্ব এবং অত্যন্ত শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে।’
এদিকে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমলা হ্যারিস। ট্রাম্পকে ফোন করে তিনি এ অভিনন্দন জানান বলে সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কমলার একজন জ্যেষ্ঠ সহযোগী। ওই ফোনকলে কমলা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি ট্রাম্পকে সব আমেরিকানদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আহ্বান জানান কমলা।
রয়টার্স পরিচালিত এক জরিপে উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্রে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দেশটির পুঁজিবাজার এখন রেকর্ড সর্বোচ্চ উচ্চতায়। মজুরিও বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। কর্মহীনতার হারও কম। এ অবস্থায়ও দেশটির নাগরিকদের জীবনযাত্রাকে চাপে ফেলেছে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি। এ পরিস্থিতির জন্য জো বাইডেন প্রশাসনকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হচ্ছে এখন। মার্কিন ভোটাররা বলছেন, বিষয়টিকে মোকাবেলার জন্য কমলা হ্যারিসের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপরেই বেশি আস্থা রাখছেন তারা।
এবারের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়লাভে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন দেশটির হিস্পানিক জাতিগোষ্ঠীভুক্ত ভোটাররা। সাধারণত হিস্পানিকদের দেখা হয় ডেমোক্র্যাটদের ভোট ব্যাংক হিসেবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপে তুলনামূলক স্বল্প আয়ের এ জাতিগোষ্ঠীর ভোটাররা এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের অনুগত গ্রামীণ শ্বেতাঙ্গ ও কলেজে পা রাখতে না পারা ভোটাররা এবারো তাকেই ভোট দিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখা হয় দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত প্রেসিডেন্টদের অন্যতম হিসেবে। এর আগে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউজে অবস্থানকালে দুবার ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। রাজনীতি ছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত জীবনযাপন নিয়েও বেশ আলোচিত তিনি। এ পর্যন্ত মার্কিন আদালতে ফৌজদারি অপরাধে চারবার অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত হয়েছেন যৌন নিপীড়ন ও মানহানিকর কার্যক্রমের অভিযোগেও। গত মে মাসে নিউইয়র্কের একটি আদালতে এক ব্যবসায়িক নথি জালিয়াতির অভিযোগেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়লাভ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ কর ও অভিবাসনসংক্রান্ত নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। তার প্রস্তাবিত ট্যারিফ কাঠামো বাস্তবায়ন হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের মার্কিন মিত্র হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর রীতিমতো বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বিরোধ। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্যমতে, ট্রাম্প করপোরেট ট্যাক্স কমানোর পাশাপাশি করহার কমানোর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের দায় ও ঋণের মাত্রাকে আরো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলতে পারে।
এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের গণহারে বের করে দেয়ারও জোর সংকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে বলেছেন, মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের অনুগত নয় বলে মনে হবে, তাদের চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা চান তিনি।