আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নামে লক্ষ্য আত্মসাৎ
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নামে লক্ষ্য টাকা আত্মসাৎ
ডেস্ক রিপোর্ট
01:26:00 | 2024-02-13
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নামে লক্ষ্য টাকা আত্মসাৎ
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করে দুস্থ ও অসহায়দের কাছ থেকে লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য ।
ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৪,৫,৬ সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নাসরিন বেগম ও তার স্বামী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অসহায় ও দরিদ্রদের প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ।
একটু ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে যায় বিছানার চাদর বৃষ্টি পড়লে নাথামা পর্যন্ত কাঁথা বালিশ মুড়ি দিয়ে দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘরের এক কোনে বসে থাকি। পলিথিনগায়ে দিয়ে বৃষ্টির রাতগুলো কাটে আমাদের। স্বামীর টাকায় ঠিক মতন সংসার চলে না তাই পরের বাসায় কাজ করি।
কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আবুল হাসানের স্ত্রী দোলেনা বেগম
তিনি আরো বলেন, শুনছি প্রধানমন্ত্রী গরিব মানুষরে ঘর দিছে। বাচ্চাদেরকে নিয়া প্রধানমন্ত্রীর ঘরে থাকবো এই আশায়, মহিলা মেম্বার নাসরিন বেগম এর কাছে গেছিলাম তার স্বামী হাবিবুর রহমান কইছে ১০ হাজার টাকার দিলে প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেবে, গরিব মানুষ এত টাকা পাবো কই তাই সুদের উপরে টাকা এনে তাকে দিয়েছিলাম, দুই বছর হয়ে গেছে এখনো ঘর পাইনি। মেম্বার এলাকার একজন প্রভাবশালি ব্যাক্তি তাই ভয়ে কাউকে বলতেও পারছিনা।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার।
নারী ইউপি সদস্যকে টাকা দিয়েও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নাসরিন বেগমের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
একই অভিযোগ করে ওই গ্রামের মৃত আযহার শেখের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি ঘরের জন্য দরখাস্ত করেছিলাম হাবিবুর রহমান ঘর দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে।
আমি তিন জায়গা থেকে সুদের উপর টাকা এনে তাকে দিয়েছি । এখন আমাকে সপ্তাহ, মাস, তারপরে জাতীয় নির্বাচন এর কথা বলে ঘুরাচ্ছে। সেদিন আমি মেম্বারের কাছে গেছি, বলছে তোমার ব্যাপারটা আমার মাথায় আছে আমি দেখতেছি।
এখনো ঘর কয়খান বাকি আছে দেখি পারি নাকি দিতে । আমি তাকে বলেছি তোমার কাছে যে ঘরের কাগজ আছে চেয়ারম্যান তাতে সই দিতে পারবে না, তুমি আমার টাকা ফেরত দাও। আমি চেয়ারম্যানের কাছে গেছিলাম চেয়ারম্যান বলছে হাবির কাছে যে টাকা দিয়েছো টাকা ফেরত না নেওয়া পর্যন্ত আমি কোন ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে পারব না।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পেরিয়ে গেলেও কোন ঘর বরাদ্দ হয়নি। ফলে ঘর ও টাকা কোনটাই না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভূমিহীন মৃত আযহার শেখের পরিবার।
ভ্যানচালক নবীর শেখ বলেন। আমি ভাড়ার ঘরে থাকি, আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর পাওয়ার আশায় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। খরচাপাতির কথা বলে মহিলা মেম্বারের স্বামী হাবিবুর রহমান আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। দীর্ঘ ২বছর আমার সাথে তালবাহানা শুরু করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চলছে আলোচনা —সমালোচনা।
জানা গেছে মহিলা মেম্বার নাসরিন ও তার স্বামী হাবিবুর রহমান ঘর দেওয়ার কথা বলে ১০ থেকে ১৫ জন অসহায় ও হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার কথা বলে কয়েক লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছে।
ভূক্তভোগী মৃত আব্দুল মান্নান হাওলাদারের স্ত্রী নুরজাহান বেগম অভিযোগ করে বলেন
আমি মহিলা মেম্বারের কাছে গেছিলাম, নাসরিন বলেন আপনি এমন সময় আইছেন ঘর তো সব দলিল হয়ে গেছে এখন ঘর কোহানদিয়ে দিবো। তাই সামনের ইলেকশনের পরে সেলে দেবো ব্যবস্থা করে । শেষে ১৫০০০ টাকা নেছে আর দলিল বাবদ ৫০০ টাকা এই মোট সাড়ে ১৫ হাজার টাকা তারে দিছিলাম । কালকে গেইছিলাম নাসরিনের সাথে দেখা, কি আমাগে কথা ভুইলা গেছো নাকি,নাসরিন বলেন না ভুলে যায় নাই চেষ্টায় আছি ।
অভিযোগের বিষয় নারী ইউপি সদস্য নাসরিন বেগম বলেন, এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা, মেম্বার থাকলে শত্রু আছে, সবাইরে তো আর ঘর দেব না, আবদার তো সবাই করে। না দিতে পারায় আমার নামে মিথ্যা কথা বলছে।
নারী ইউপি সদস্যের স্বামী হাবিবুর রহমান বলেন, ঘর দেবে চেয়ারম্যান, মেম্বার আমি ঘর দেওয়ার কে আমি কি মেম্বার। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, আমার প্রতিপক্ষরা অহেতুক হয়রানি করতে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
অভিযোগের বিষয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী আহমেদ শেখ, বলেন, ভূমিহীন ও অস্বচ্ছ পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সবাইকে সতর্কবাণী দিয়েছি, কেউ অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেন করবেন না। নাসরিন বেগম সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে এটা আমার জানা নাই, তবে উড়ন্ত কোন কথার মূল্যায়ন আমি করিনা, আমার কাছে যদি কেউ অভিযোগ দেয়, তার সত্যতা আমি যাচাই—বাছাই করব। সত্যতা প্রমাণ পেলে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মইনুল ইসলাম বলেন, গৃহহীন এবং ভূমিহীন সমাজের প্রান্তিক লোকদেরকে গৃহের ব্যবস্থা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুই শতাংশ জমিসহ গৃহের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হচ্ছে এটি। এ প্রক্রিয়ায় কেউ যদি অসৎ উপায় অবলম্বন করে থাকে কিংবা কারো কাছ থেকে অর্থ বা অন্যায় সুযোগ—সুবিধা নিয়ে থাকে উপজেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।